
সংবিধান সংশোধন ও দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ নিয়ে আলোচনা
ঐকমত্যে আসতে পারেনি রাজনৈতিক দলগুলো
- আপলোড সময় : ১৬-০৭-২০২৫ ০৪:৫০:০৯ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ১৬-০৭-২০২৫ ০৪:৫০:০৯ অপরাহ্ন


* ঐকমত্য কমিশন ব্যর্থ হলে দায় সবার ওপর পড়বে : ড. আলী রীয়াজ
* তত্ত্বাবধায়কের রায়ে সন্তুষ্ট, অসঙ্গতি নিয়ে এ মাসেই আপিল করবো : বদিউল আলম
* একটি দল সংবিধান সংশোধনের বিপক্ষে : জামায়াত
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সংবিধান সংশোধন ও দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের বিষয়ে টানা তিন দিনের বেশি আলোচনা করেও ঐকমত্যে আসতে পারেনি রাজনৈতিক দলগুলো। তাই এসব বিষয় নিয়ে কমিশনের সিদ্ধান্তের আগেই মন্তব্য করতে চায় না বিএনপি। তবে কমিশন কী সিদ্ধান্ত নিচ্ছে সেটির ওপর ভিত্তি করে দলটি তাদের প্রতিক্রিয়া জানাবে, এমনটি জানিয়েছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় দফার ১৪তম দিনের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করার সময় তিনি এসব কথা বলেন।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের উচ্চকক্ষ নিয়ে আলোচনা হয়েছে, যেহেতু নিম্নকক্ষে নির্বাচনের পদ্ধতি নিয়ে কারও দ্বিমত নেই। দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের বিষয়ে বিভিন্ন রকমের মতামত থাকার কারণে সাড়ে তিন দিন আলোচনা হয়েছে। দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের ব্যাপারে মোটামুটি অধিকাংশ রাজনৈতিক দল একমত। কিন্তু তার গঠন প্রক্রিয়া কী রকম হবে এবং পাওয়ার ফাংশন কীভাবে হবে সেটি নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক আছে। দলের অবস্থান নিয়ে তিনি বলেন, আমাদের দলের পক্ষ থেকে যে প্রস্তাব দিয়েছিলাম আমরা সেই জায়গাতেই আছি। আমাদের ৩১ দফার ভিত্তিতে আমরা যে আইডিয়া নিয়ে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের বিষয়ে বলেছিলাম। সেটি হলো, যারা দেশের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার বিশিষ্টজন, যাদের জাতিগঠনে অবদান আছে এবং যারা পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী, তাদের মেধা, প্রজ্ঞা এবং অভিজ্ঞতার অবদান যেন জাতিগঠনের কার্যক্রমে প্রতিফলিত হয়। জাতি যাতে সমৃদ্ধ হয় সেই আইডিয়া থেকেই আমরা এই প্রস্তাবটি রেখেছিলাম। সেখানে আমরা উচ্চকক্ষে ১০০টি আসন রাখার জন্য বলেছিলাম। আমরা বলেছি, বিদ্যমান নারী সংরক্ষিত আসনে যেভাবে আসনের অনুপাতে নির্ধারণ করা হয় সেভাবে উচ্চকক্ষেও হবে।
বিতর্কের ব্যাপারে তিনি বলেন, এই বিষয়টা নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক হচ্ছে তিন-চার দিন যাবত। কেউ চান পিআর পদ্ধতিতে। এখানে আবার পাওয়ার ফাংশনের বিষয় আছে। সাধারণ বিল কীভাবে পাস হবে, সংবিধান সংশোধন হলে উচ্চকক্ষে কীভাবে পাস হবে ইত্যাদি। তো ব্যাপক আলোচনার ভিত্তিতে কোথাও ঐকমত্যে আসা যায়নি। এখন বাংলাদেশের আর্থিক সক্ষমতা বিবেচনায় দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের প্রয়োজন আছে কি না সে প্রশ্নও অনেক দল তুলছে। তিনি বলেন, সমস্ত বিষয়ে সবার সঙ্গে আলোচনা করে ঐকমত্য কমিশন একটা সিদ্ধান্তে আসার কথা। সেই সিদ্ধান্ত জানানোর পরই আমাদের প্রতিক্রিয়া বা সম্মতি-অসম্মতির বিষয়ে জানাতে পারবা। সেজন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। সংবিধানের সংশোধন কীভাবে হবে সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আমি একটি অতিরিক্ত প্রস্তাব দিয়েছিলাম। সেটি মোটামুটি সবাই গ্রহণ করেছে। গণভোট নিয়ে বেশকিছু মতামত আছে। সেগুলো নিয়েও আলোচনা হয়েছে। তবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ বলেছেন, কমিশন ব্যর্থ হলে সবাই ব্যর্থ, এর দায় সবার ওপর পড়বে। তাই ব্যর্থতার কোনও সুযোগ নেই। সবার সহযোগিতায় আমাদের সফল হতেই হবে। এই সাফল্যের মাপকাঠি হচ্ছে একটা কাঠামোগত সংস্কারে আমরা কতটুকু একমত হতে পারছি তার ওপর।
ড. আলী রীয়াজ বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রাথমিক পর্যায়ের আলোচনায় কিছু বিষয়ে একমত হওয়া গেছে। দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনায়ও কিছু বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে। এখনও যেসব বিষয়ে মতভিন্নতা রয়েছে, তা নিয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি তাদের দায়-দায়িত্ব অনুভব করা উচিত। তিনি বলেন, কমিশন কোনও আলাদা সত্ত্বা নয়। এটি রাজনৈতিক দলগুলোর প্রচেষ্টার অংশীদার। তাই, আমরা যদি ব্যর্থ হই, এই ব্যর্থতা কমিশনের একার নয়, আমাদের সবার। কাজেই ব্যর্থতার কোনও সুযোগ নেই। সবার সহযোগিতায় আমাদের সফল হতে হবে।
আলোচনায় বিএনপি, জামায়াত, এলডিপি ও এনসিপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা অংশগ্রহণ করেন। কমিশনের সদস্য হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, ড. মো. আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।
সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে আদালতের রায়ে আমরা সন্তুষ্ট। তিনি বলেন, এ রায় গণতন্ত্রের প্রাথমিক বিজয়। যদিও রায়ে কিছু বিষয়ে অঙ্গতি রয়েছে। সে বিষয়ে চলতি মাসেই আপিল করবো। আশা করি, এর মাধ্যমে চূড়ান্ত সমাধান হবে। এদিন দুপুরে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রসঙ্গত, ড. বদিউল আলম মজুমদার এ সংক্রান্ত মামলার রিটকারী। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন এ মামলার আইনজীবী ড. শরীফ ভূঁইয়া। ড. বদিউল আলম মজুমদার জানান, পঞ্চদশ সংশোধনীর বৈধতা ছিল না। মূলত অবৈধভাবে ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতেই শেখ হাসিনা সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী আনেন। যেখানে কারও মতামত তোয়াক্কা করা হয়নি। শুধু তাই নয়, যে কমিটির গঠন করা হয়েছিল, সেটির প্রস্তাবও নেয়া হয়নি। তিনি বলেন, এ সংশোধনীতে জনগণের মতামতেরও প্রয়োজনীয়তা অনুভব করা হয়নি। যাদের মতামত নেয়া হয়েছিল, তাদের বেশিরভাগই সরকার দলীয় ছিলেন। শুধু পঞ্চদশ সংশোধনী নয়, এর মাধ্যমে যে সরকার গঠিত হয়েছে সেই সরকারও অবৈধ। মানে শেখ হাসিনাও অবৈধ। আদালতের রায়েও তা বলা হয়েছে বলে তিনি জানান। মামলার আইনজীবী ড. শরীফ ভূইয়া বলেন, পঞ্চদশ সংশোধনী ও সরকার অবৈধ ছিল। সংবিধানের সংশোধনী নিয়মানুযায়ী হয়নি। রায়ে এসব বিষয় উল্লেখ করা হয়নি। ত্রয়োদশ সংশোধনী রিভিউ করে পঞ্চদশ সংশোধনী পুরোপুরি বাতিল করলে পূর্ণাঙ্গ হবে বলে তিনি জানান। এর আগে গত ৮ জুলাই পঞ্চদশ সংশোধনী নিয়ে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেন উচ্চ আদালত। এর মধ্য দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহাল হওয়ার পথ হলো।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের বলেছেন, একটি মাত্র দল বা সরকারের একক সিদ্ধান্তে সংবিধান সংশোধনের বিপক্ষে তার দল। এর জন্য দুই-তৃতীয়াংশ মেজরিটি থাকতে হবে। বিরোধী দলেরও মতামত নিতে হবে। আর মৌলিক বিষয়ে সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে গণভোট হতে হবে এবং এটি যেন রাষ্ট্রের জন্য হয়। রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় দফায় ১৪তম দিনের সংলাপের মধ্যাহ্নে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন। ডা. তাহের বলেন, কিছু সংখ্যক দল ছাড়া আমরা বেশিরভাগই দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্টের বিষয়ে একমত। তবে এক্ষেত্রে পিআর পদ্ধতির ব্যাপারে জোর দেয়া হয়েছে। অপরদিকে সংসদে নারী আসন ১০০ করার পক্ষেও মত দিয়েছে জামায়াত। তবে সেখানেও সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে বলে তিনি জানান। বিফিংয়ে জামায়াতের প্রতিনিধি দলে আরও উপস্থিত ছিলেন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান ও ড. এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ